অবকাঠামোগত বাধাসমূহ
আশ্রয়কেন্দ্র বা নিরাপদ স্থানে থাকা অবকাঠামোগত বাধাসমূহ দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে যখন বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, মানুষ পরিবার ও সহায়তাকারীদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে তখন সীমিত চলাচলের মানুষদের পক্ষে নিরাপদ স্থানে পৌঁছানো সম্ভব হয় না অবকাঠামোগত বাধা থাকার কারণে।
একজন ব্যবহারকারীর দৃষ্টিকোণ থেকে অবকাঠামোগত বা ভৌত বাধাগুলো কাটিয়ে উঠার ক্ষেত্রে চারটি সংশ্লিষ্ট দিক রয়েছে:
১. কীভাবে কোন একটি এলাকা, স্থান বা অবকাঠামোতে পৌঁছাব
২. সেই এলাকা, স্থান বা অবকাঠামোতে পৌঁছানোর পর সেখানে কীভাবে প্রবেশ করব
৩. এলাকা, স্থান বা অবকাঠামোর অভ্যন্তরে প্রবেশ করার পর ভেতরে চলাচলের উপায় কী হবে
৪. কীভাবে অবকাঠামো ও এর সুবিধাগুলো ব্যবহার করব
উল্লেখিত দিকগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে কোন একটি এলাকা বা অবকাঠামো তৈরির পরিকল্পনা, নকশা, নির্মাণ বা নির্মাণ-পরবর্তী সময়ে নতুন কোন সুবিধা বা সংস্কার করার সময় যে বিষয়গুলো মনে রাখতে হবে:
- এলাকা বা স্থান বা অবকাঠামোটি যেন সমতল, প্রবেশগম্য ও বাধামুক্ত হয়; যেমন সেখানে চলাচলের পথে যেন ভারী বস্তু, ইট সুরকি ইত্যাদি না থাকে।
- অবকাঠামোতে ঢোকার মূল প্রবেশপথমুখী রাস্তাটি যেন প্রবেশগম্য ও বাধামুক্ত হয়।
- মূল প্রবেশপথটি যেন বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির জন্য প্রবেশগম্য হয় এবং সেখানে যেন র্যাম্প বসানোর জায়গা থাকে।
- চলাচলকারীদের সহায়তা করতে ও তাদেরকে নিরাপত্তা দিতে র্যাম্প, হাঁটার পথ এবং সিড়িতে হ্যান্ডরেইল বা হাতে ধরার রেলিং লাগানো।
- প্রবেশমুখ (যেমন দরজার) অন্ততপক্ষে ৯০ সেন্টিমিটার চওড়া হওয়া দরকার যাতে করে হুইলচেয়ার সহজেই ঢুকতে পারে।
- প্রবেশমুখে বৈসাদৃশ্যমূলক উজ্জ্বল রং রাখা যাতে করে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পক্ষে সহজেই শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
- দরজা ও জানালাগুলো যেন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীদের জন্য প্রবেশগম্য হয় এবং শারীরিকভাবে সীমাবদ্ধতা রয়েছে এমন ব্যক্তিরা যাতে সেগুলো সহজেই খুলতে ও বন্ধ করতে পারে।
- অবকাঠামোর মধ্যকার জায়গাগুলো যেন অতোটা চওড়া হয় যাতে করে একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী তার হুইলচেয়ার সম্পূর্ণরূপে ঘুরাতে পারে।
- প্রবেশগম্যতা ও নিরাপত্তা বাড়াতে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা করা।
- আশ্রয়কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাড়াতে অন্যান্য পদক্ষেপগুলো নেওয়ার কথাও বিবেচনা করতে হবে যেমন আসবাবপত্র বেধে রাখা কিংবা স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত এলাকাগুলোতে কোন ধারালো বস্তু বা প্রাপ্ত যেন না থাকে।
- কাজ করার স্থানগুলো যেন প্রবেশগম্য হয় এবং সেখানে যেন বিশ্রামের প্রয়োজনে বিশ্রাম নেওয়ার মতো বা বসার ব্যবস্থা থাকে।
- পয়ঃনিষ্কাশন বা স্যানিটারি সুবিধাগুলো যেন প্রবেশগম্য ও সহজলভ্য হয়। এগুলো যেন অবকাঠামোর মধ্যে কিংবা কাছাকাছি থাকে। টয়লেটের বসার সিটগুলোর উচ্চতা যেন ৪৫-৫০ সেন্টিমিটার হয় এবং সেখানে যেন একটি হাতল থাকে যা ব্যবহারকারীকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেমন হুইলচেয়ার থেকে টয়লেটের কমোডে বসার সিটে যাওয়া ও আসার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।
- শারীরিক প্রতিবন্ধী, প্রবীণ ব্যক্তি ও শিশুরা যেন সহজেই দরজা খুলতে ও বন্ধ করতে পারে।
- অবকাঠামো নির্মাণে এমন উপাদান ব্যবহার করা কিংবা অবকাঠামোতে এমন ব্যবস্থা রাখা যাতে করে গরমে খুব গরম বা শীতে খুব ঠান্ডা না হয়।
মনে রাখুন: অপ্রবেশগম্য অবকাঠামোগুলো সাধারণত স্থপতি, পরিকল্পনাকারী কিংবা নির্মাণকারীদের মধ্যে প্রবেশগম্যতার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে সচেতনতার অভাব থেকে হয়ে থাকে কিংবা তাদের মধ্যে থাকা ভুল ধারণার কারণেও এমনটা হয়ে থাকে; যেমন অনেকে মনে করেন যে প্রবেশগম্য অবকাঠামো মানে প্রচুর খরচ এবং এতে অনেক বড় ধরনের কারিগরি দক্ষতার দরকার হয় কিন্তু বাস্তবে সেটা সত্যি নয়। যে ধরনের অবকাঠামোগত বাধা দূর করার মধ্য দিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে অবদান রাখা সম্ভব হয় এবং এটি সকলের জন্যই বিনিয়োগ।