লক্ষ্য জনগোষ্ঠী নির্বাচন করা
জরুরি ত্রাণ বিতরণের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক লক্ষ্য জনগোষ্ঠী খুঁজে বের করার জন্য লক্ষ্য জনগোষ্ঠী নির্বাচনের মানদন্ড এমন হতে হবে যাতে করে অন্তর্ভুক্তিমূলক লক্ষ্য জনগোষ্ঠী খুঁজে পাওয়া যায়। কমিউনিটির দুর্যোগে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপগুলোকে বিবেচনায় নিতে হবে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক লক্ষ্য জনগোষ্ঠী খুঁজে পেতে উপযুক্ত টুলসগুলো সহজলভ্য রাখতে হবে যাতে করে দুর্যোগের সময় দ্রুত সেগুলো প্রয়োগ করা যায়। একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক মূল্যায়ন ও লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য স্টাফ ও স্থানীয় পর্যাায়ের মূল স্টেকহোল্ডারদের প্রশিক্ষণ এবং সংবেদনশীল করতে হবে।
অন্তর্ভুক্তিমূলক লক্ষ্য নির্ধারণের মানদন্ডে নিচে উল্লেখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত্:
১. জনমিতিক বৈশিষ্ট্যাবলী: যে পরিবারে মূল উপার্জনকারী একজন একক (অবিবাহিত/তালাকপ্রাপ্ত) নারী, প্রবীণ ব্যক্তি, শিশু বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি; যেখানে খানা বা পরিবারে বেশ কয়েকটি শিশু রয়েছে, গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মা রয়েছেন; পরিবারের সদস্যরা যেখানে সমাজ-বহির্ভূত এবং কম প্রতিনিধিত্বকারী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ইত্যাদি।
২. আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্যাবলী: যেখানে পরিবারটি দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে এবং দৈনিক মজুরির মাধ্যমে খাদ্য সংগ্রহ বা ব্যবস্থাপনা করে; যেখানে একাধিক নির্ভরশীল সদস্য রয়েছে এবং পরিবারে একজনমাত্র কিংবা কেউই উপাজর্নকারী নেই (তবে মনে রাখুন যে পরিবারে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি কিংবা প্রবীণ ব্যক্তি থাকলে তাদের সাথে আলাপ ছাড়াই কিংবা তাদের সম্পর্কে না জেনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদেরকে নির্ভরশীল হিসেবে ধরে নেবেন না); পরিবারে চাষাবাদ এবং উত্পাদনশীল সম্পদের জন্য কোন জমি নেই; পরিবার একটি ভাড়া জায়গায় বসবাস করে কিংবা গৃহহীন; বাড়িটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত, স্থানীয় বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন এবং শুধু হাঁটাপথে প্রবেশগম্য ইত্যাদি।
৩. পরিবারের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার উপর দুর্যোগের প্রভাব: যেখানে উপার্জনকারী তার কাজ হারিয়েছেন, দুর্যোগে জখমপ্রাপ্ত হয়েছেন কিংবা মারা গিয়েছেন; বাড়ির অবকাঠামো এবং সুযোগ সুবিধা (অর্থাত্ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্যবিধি — ওয়াশ ব্যবস্থা) ধ্বংস হয়েছে; পরিবারের সদস্যরা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে তাদের সম্পদ বিক্রি করছে কিংবা তারা নতুন ঋণ নিচ্ছে; পরিবারের সদস্যরা খাদ্য ঘাটতির কারণে খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছে; পরিবারের সদস্যরা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সহায়তা এবং মনোসামাজিক সেবা নিতে পারছে না এই ধরনের সেবাগুলোতে তাদের প্রবেশগম্যতা না থাকার কারণে; পরিবারের প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, দীর্ঘকাল ধরে অসুস্থ কিংবা প্রবীণ ব্যক্তি যাদের নিয়মিত ওষুধ বা সহায়ক প্রযুক্তি সেবার দরকার হয় সাম্প্রতিক দুর্যোগের কারণে তাদের সেবা ব্যাহত হয়েছে; ইত্যাদি।
ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সদস্য বিশেষ করে যারা উচ্চমাত্রার অপবাদের মুখোমুখি হয় (যেমন, বুদ্ধিবৃত্তিক বা শিখন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা, এইচআইভি/এইডস, নারী ও মেয়েশিশু প্রতিবন্ধী), লক্ষ্য নির্ধারণের প্রক্রিয়ায় ঝুঁকিগুলো লুকায়িত থাকতে পারে।
- এটি প্রত্যাশিত যে প্রবীণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিসহ প্রায় ১৫% প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শনাক্ত হতে পারে এবং যদি মোট সংখ্যা এরচেয়ে কম হয় তাহলে এই বিষয়টি নিয়ে সেই সংস্থার সাথে কথা বলুন যারা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং এর কারণগুলো চিহ্নিত করেছে।
- দুর্যোগকালে উচ্চ ঝুঁকির মুখোমুখি হতে পারে যে কারণগুলোতে সেই কারণগুলোর মধ্যেকার মিলগুলোকে বিবেচনায় নিন (যেমন নারী, প্রতিবন্ধিতা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য যারা তারা দুর্যোগের ক্ষতির ক্ষেত্রে বহুগুণ বেশি ঝুঁকির মুখে থাকে এবং জরুরি সহায়তা পাওয়া থেকে বাদ পড়তে পারে)।
- যোগ্যতার মানদন্ড এবং প্রাপক কারা হবে সেটা সংজ্ঞায়িত করার জন্য লক্ষ্য জনগোষ্ঠী নির্বাচন প্রক্রিয়াকে কমিউনিটিভিত্তিক করুন, যেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী নারী ও পুরুষ প্রবীণ ব্যক্তি এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর ব্যক্তিরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে (যেমন: একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক লক্ষ্য নির্ধারণ কমিটি গঠন করা)।
- লক্ষ্য জনগোষ্ঠী নির্ধারণ করা প্রক্রিয়া এবং ধরনগুলো নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও প্রবেশগম্য যোগাযোগ নিশ্চিত করুন।
- লক্ষ্য জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রবেশগম্য পদ্ধতিতে কমিউনিটি ফিডব্যাক এবং রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও নিয়মিত ফিডব্যাক সংগ্রহ করা নিশ্চিত করুন।
- ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের কার্যকর সীমাবদ্ধতাগুলোর স্তর শনাক্ত করতে চাহিদা নিরূপণকালে ওয়াশিংটন গ্রুপের প্রশ্নাবলী ব্যবহার করুন।
শুধুমাত্র প্রতিবন্ধিতার অবস্থার উপর ভিত্তি করে জাতিসংঘের প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার সনদ (সিআরপিডি) পালন করা যাবে না এবং এতে করে বরং নেতিবাচক ফলাফল পাওয়া যাবে যেমন আরো বেশি অপবাদ ও বর্জনের মতো ঘটনা ঘটবে। একটি পরিবারের সহায়তার প্রয়োজনীয়তাগুলো সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করতে হবে; প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীণ ব্যক্তি এবং যারা দীর্ঘকাল ধরে অসুস্থ তারা প্রায়ই জরুরি সহায়তায় সীমিত প্রবেশাধিকার পেয়ে থাকে এবং তাদেরকে প্রবেশগম্যতা, সহায়ক ডিভাইস, ব্যক্তিগত সহায়তা পাওয়া, যাতায়াত ও মেডিকেল চাহিদা পূরণে অতিরিক্ত খরচ করতে হয়।