প্রাথমিক চিকিত্সা
প্রাথমিক চিকিত্সা/পরিচর্যা সাথে সম্পৃক্ত টিমের সদস্য যারা প্রথম সাড়াদানকারী ও স্বেচ্ছাসেবকদের নারী, পুরুষ, শিশু, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীণ ব্যক্তি এবং যারা দীর্ঘমেয়াদে অসুস্থ তাদের সুনির্দিষ্ট মেডিকেল ও স্বাস্থ্যগত বিষয়ে তাদেরকে কীভাবে সেবা দিতে হবে তার জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কাউকে প্রাথমিক চিকিত্সা বা প্রাথমিক পরিচর্যা দেয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ পরামর্শ বা টিপস হলো:
- যে কোন ধরনের প্রাথমিক চিকিত্সা দেয়ার শুরুতেই যাকে সেবা দেয়া হবে তার কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে এবং আপনি কী করতে যাচ্ছেন সেটা তাকে ব্যাখ্যা করে বলতে হবে।
- গতানুগতিক চিন্তা বাদ দিতে হবে এবং ওই ব্যক্তির সামর্থ্য কী আছে কিংবা কী সামর্থ্য নেই এমন ধরনের অনুমান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- আত্মবিশ্বাসী হতে হবে এবং আশ্বস্ত করতে হবে।
- যাকে সেবা দেবেন কিংবা সাহায্য করবেন সরাসরি তার সাথে কথা বলুন, তার আত্মীয় কিংবা পরিচর্যাকারীর সাথে নয়। আপনি যদি তার কথা বুঝতে না পারেন তাহলে তাকে কথাটি আবারও বলার জন্য অনুরোধ করুন।
- তার কোন সহায়ক উপকরণ ধরার আগে জিজ্ঞাসা করে অনুমতি নিয়ে নিন, এমনকি হুইলচেয়ার ধরার আগেও।
একজন অন্ধ ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়ার ক্ষেত্রে:
- আপনি যদি তাকে ছেড়ে অন্য কোথাও যান তাহলে তাকে জানান যে আপনি চলে যাচ্ছেন, এবং যদি আবারও ফিরে আসবেন সেটাও তাকে বলুন যে আপনি চলে যাচ্ছেন এবং কিছুক্ষণ পর আবারো ফিরে আসবেন।
- আপনি কি কি করছেন সেটা বর্ণনা করুন যাতে করে যাকে সেবা দিচ্ছেন সে আপনি কি কি করছেন সেটা বুঝতে পারে।
- আপনি যদি নিশ্চিতভাবে বুঝতে না পারেন যে কীভাবে সহায়তা করবেন তাহলে তাকে জিজ্ঞাসা করুন যে সে কীভাবে সাহায্য পেতে চাচ্ছে।
বধির কিংবা শ্রবণ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়ার ক্ষেত্রে:
- কথা বলা শুরু করার আগে ওই ব্যক্তির দৃষ্টি আকর্ষণ করুন। এটা করার সেরা উপায় হলো ব্যক্তির কাঁধে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়া কিংবা হালকাভাবে আপনার হাত নাড়ানো।
- ব্যক্তির কাছে জানতে চান যে আপনি কীভাবে তাকে সাহায্য করতে পারেন। চিত্কার করবেন না।
- ধৈর্য্য ধরে যোগাযোগ করুন। যদি যোগাযোগ করা কঠিন হয়, তাহলে ব্যক্তির কাছে জানতে চান যে সে কি ভিন্ন কোন উপায়ে যোগাযোগ করতে চাচ্ছে, যেমন কলম ও কাগজ।
- যদি ওই ব্যক্তি হিয়ারিং এইড/ শ্রবণ যন্ত্র ব্যবহার করে এবং তারপরও তার সাথে যোগাযোগ করতে আপনার সমস্যা হয় তাহলে সেখানে অন্য কোন শব্দ হলে সেই শব্দ বন্ধ করার ব্যবস্থা নিন, যেমন ফ্যান চলার কারণে শব্দ হলে ফ্যান বন্ধ করে দিন কিংবা তাকে নিয়ে একটি নিরিবিলি ও শান্ত জায়গায় যান, যদি সম্ভব হয়।
বধিরঅন্ধ ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়ার ক্ষেত্রে:
- "বধিরঅন্ধ" বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায় যিনি একাধারে বধির ও অন্ধ, যার মধ্যে দেখা ও শোনায় কিছুটা হলেও সমস্যা আছে। বধিরঅন্ধ ব্যক্তিদের যোগাযোগে সহায়তা করার জন্য অনেকের সাথে একজন পেশাজীবী থাকেন যাকে 'ইন্টারভেনর' বলে।
- যদি ইন্টারভেনর থাকে, তাহলে প্রথমে তাকে আপনার পরিচয় জানান এবং তারপর সরাসরি অসুস্থ বা জখমপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাথে কথা বলুন।
- যাকে প্রাথমিক চিকিত্সা বা সেবা দেবেন তাকে হঠাত্ করে ধরবেন বা ছোবেন না এবং অনুমতি ছাড়া তাকে ছোবেন না।
শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়ার ক্ষেত্রে:
- অনেক ধরনের শারীরিক প্রতিবন্ধিতা রয়েছে এবং সেগুলোর সবগুলোই দেখা যায় না।
- ব্যক্তিকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে যাবেন না: আপনি যে অবস্থা দেখতে পাচ্ছেন সেটা আগের কোন অবস্থা বা রোগের লক্ষণ কিনা নাকি নতুন কিছু সেটা বুঝতে ও জানতে পারাটা গুরুত্বপূর্ণ।
- স্বাভাবিকভাবে কথা বলুন (শারীরিক এবং মানসিক প্রতিবন্ধিতা একই বিষয় নয়)।
- যাকে সেবা দিচ্ছেন তার সাথে চোখে চোখে যোগাযোগ হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ আর সে কারণে যদি আপনি যেখানে বসেছেন সেই জায়গাটা পরিবর্তন করতে হয়, করে নিতে হবে।
বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিংবা বিকাশগত প্রতিবন্ধিতা আছে এমন কাউকে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়ার ক্ষেত্রে:
- আপনার দিক থেকে যতোটা সম্ভব তার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করুন।
- কথা বলে যোগাযোগ করার সময় যতোটা সম্ভব সহজ ভাষা ও সরাসরি যোগাযোগ করুন।
- একবারে একটির বেশি তথ্য দেবেন না।
কথা বলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আছে এমন কাউকে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়ার ক্ষেত্রে:
- এমন ধরনের প্রশ্ন দিয়ে প্রয়োজনীয় উত্তর জেনে নেওয়ার চেষ্টা করুন, যেগুলোর উত্তর শুধু "হ্যা" বা "না" দিয়ে করা যায়।
- আপনার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য এবং আপনার সাথে যোগাযোগ করার জন্য ব্যক্তিকে সময় দিন।
- তাকে কথা শেষ করার জন্য সময় দিন এবং তার বলা কথা আপনি শেষ করে দেবার কোন চেষ্টা করবেন না।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রবীণ ব্যক্তি এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা থাকে, যেখানে তারা তাদের জীবনের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাস্তবসম্মত উপদেশ ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রাথমিক চিকিত্সায় সাড়াদানকারীদের অবশ্যই স্নায়ু কিংবা মানসিক প্রতিবন্ধীদের সাথে আগেভাগে যোগাযোগ করা চর্চা করতে হবে।
জরুরি পরিস্থিতিতে চিকিত্সা পাওয়ার সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে প্রাথমিক চিকিত্সায় দায়িত্বপালনাকারীদের ভূমিকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে:
- দুর্যোগে আক্রান্ত স্বতন্ত্র ব্যক্তিদের সহায়তা করা যাতে করে তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থার অবনতি রোধ করা যায়।
- চলন ও সহায়ক যন্ত্রপাতি মেরামত কোথায় করা যাবে তা খুঁজে পেতে সহায়তা করা।
- দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদা অনুযায়ী ওষুধ ও চিকিত্সা সরঞ্জাম বা বিকল্প খুঁজে পেতে সহায়তা করা (যেমন, কোন কোন এলাকায় এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে ব্যাক-আপ পাওয়ার খুঁজে পেতে সহায়তা করা, বিশেষ করে যারা বৈদ্যুতিক শক্তি চালিত মেডিকেল ও সহায়ক উপকরণ ব্যবহার করেন)।