পরিভাষা
লিখিত ও মৌখিক ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নারী, পুরুষ, মেয়ে ও ছেলে প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রতিবন্ধী এবং জাতিগত ও সাংস্কৃতিক পটভূমি নির্বিশেষে সকল মানুষকে সমান গুরুত্ব দিয়ে, তাদেরকে সমান মর্যাদা, সততা ও সম্মান করলে সংবেদনশীল ভাষা ব্যবহারের লক্ষ্য অর্জিত হয়।
পরিভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে যাদের বেলায় পরিভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে তাদের কাছ থেকে জেনে নিলে সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। আলোচ্য ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী সংস্থাগুলোর কাছ থেকে তাদের পছন্দনীয় পরিভাষা জেনে নেওয়া ভালো। কোন কিছু লেখা ও প্রকাশ করার সময় এবং কমিউনিটির সাথে সভা করা কিংবা প্রশিক্ষণে সংবেদনশীল ভাষা ব্যবহার করতে হবে।
সংবেদনশীল ভাষার সাধারণ নীতিমালা:
- গতানুগতিকতাকে চেনা ও চ্যালেঞ্জ করা।
- একথা নিশ্চিত করা যে জনগোষ্ঠীর সকল গ্রুপ দৃশ্যমান হয়।
- শ্রদ্ধাশীল হওয়া এবং তুচ্ছ ও অধীনস্থ এমন ধারণা দেয়া থেকে বিরত থাকা।
জেন্ডার সংবেদনশীল ভাষা: জেন্ডার উল্লেখ না করলেও চলে কিংবা যেখানে জেন্ডার উল্লেখ করা অপ্রয়োজনীয় এমন পরিস্থিতিতে জেন্ডার উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকুন। ভাষা ব্যবহারের আদর্শ মানদন্ড অনুযায়ী শুধু পুরুষ বাচ্যটি ব্যবহার করুন। এমন ভাষা ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন যা নারীকে বোঝায় এবং নারী ও মেয়ে শিশুদের নিকৃষ্ট বা তুচ্ছ বোঝায়।
এমন যদি হয় যে, কোন একটি নির্দিষ্ট লিঙ্গ বা জেন্ডার উল্লেখ করা প্রয়োজন নেই সেখানে সবচেয়ে ভাল বুদ্ধি হলো জেন্ডার উহ্য রেখে কথা বলা বা লেখা (জেন্ডার-নিরপেক্ষ শব্দ ব্যবহার করা)। উদাহরণস্বরূপ, তারা, তাদের ইত্যাদি।
প্রতিবন্ধিতা-সংবেদনশীল ভাষার ক্ষেত্রে 'ব্যক্তিকে প্রথম উল্লেখ করুন'। যেমন (স্বাস্থ্যগত ক্ষেত্রে) কারো প্রতিবন্ধিতা বোঝাতে প্রথমে ব্যক্তি তারপর তার প্রতিবন্ধিতার কথা বলুন। "প্রতিবন্ধী ব্যক্তি" শুধু "প্রতিবন্ধী" না বলা, কিংবা 'শিক্ষার্থী যে অন্ধ', 'নারী যার ফিস্টুলা হয়েছে', 'হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী কিংবা হুইলচেয়ার ব্যবহারকারী ব্যক্তি'।
প্রতিবন্ধিতা একজন ব্যক্তির অনেকগুলো পরিচয় বা বৈশিষ্ট্যের একটি মাত্র দিক তুলে ধরে। তাই আমরা যদি শুধু "প্রতিবন্ধী" কিংবা "পঙ্গু" কথাটি ব্যবহার করি তাহলে সেটা ব্যক্তির অবস্থা বা প্রতিবন্ধিতাকে তুলে ধরে এবং সেটা আসলে ওই অবস্থায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে তুলে ধরে না বা প্রকাশ করে না। আবার কোন একটি ভৌত অবকাঠামো বা সেবা যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ব্যবহার উপযোগী সেটাকে "প্রতিবন্ধী-বান্ধব' না বলে বলতে হবে "প্রবেশগম্য"।
প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতাকে পৃথক করার জন্য নিচের পরিভাষা ব্যবহার করুন:
- দৃষ্টি প্রতিবন্ধিতা আছে এমন ব্যক্তিকে "অন্ধ ব্যক্তি" কিংবা "ক্ষীণ দৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি" বলুন।
- শারীরিক প্রতিবন্ধিতা আছে এমন ব্যক্তিকে "শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি" বলুন।
- শ্রবণ প্রতিবন্ধিতা আছে এমন ব্যক্তিকে "বধির ব্যক্তি" কিংবা "শ্রবণে সমস্যা হয় এমন ব্যক্তি"।
- বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা কিংবা মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিবন্ধিতা আছে এমন ব্যক্তিকে "বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ব্যক্তি" কিংবা "মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তি/মনোসামাজিক প্রতিবন্ধী" ব্যবহার করুন।
- যখন কারো অসুস্থতা কিংবা রোগ সম্পর্কে কিছু বলা হবে রোগ দ্বারা রোগীকে চিহ্নিত না করে রোগীর একটি রোগ আছে সেটা বলতে হবে; যেমন ডায়াবেটিক রোগী না বলে তার ডায়াবেটিকস আছে সেটা বলতে হবে।
- যখন কেউ খুবই চাপের পরিস্থিতির মধ্যে আছে তাদেরকে "ভীত" না বলে কিংবা তাদের ভয়ের অভিজ্ঞতাকে তুলে না ধরে বরং তারা মানসিক চাপে আছে এবং তাদের সহায়তা দরকার সেটাই তুলে ধরতে হবে।
বয়স-সংবেদনশীল ভাষার ক্ষেত্রে "বুড়ো" কিংবা "বৃদ্ধ" না বলে প্রবীণ ব্যক্তি বলুন।